লূক লিখিত সুসমাচার ১৩:১-৩৫
-
তোমরা যদি অনুতপ্ত না হও, তা হলে তোমরা বিনষ্ট হবে (১-৫)
-
ফল ধরে না এমন এক ডুমুর গাছের দৃষ্টান্ত (৬-৯)
-
একজন অক্ষম মহিলাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করা হয় (১০-১৭)
-
সরষেদানা ও খামিরের দৃষ্টান্ত (১৮-২১)
-
সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন (২২-৩০)
-
হেরোদ, ‘সেই ধূর্ত শিয়াল’ (৩১-৩৩)
-
যিশু জেরুসালেমের বিষয়ে শোক করেন (৩৪, ৩৫)
১৩ সেইসময় সেখানে উপস্থিত কয়েক জন লোক যিশুকে জানাল, কিছু গালীলীয় যখন মন্দিরে বলি উৎসর্গ করছিল, তখন পীলাত তাদের হত্যা করেছিলেন।
২ তা শোনার পর তিনি তাদের বললেন: “তোমরা কী মনে কর, সেই গালীলীয়েরা অন্য সমস্ত গালীলীয়ের চেয়ে অধিক পাপী ছিল বলে কি এই পরিণতি ভোগ করেছে?
৩ একেবারেই না; কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যদি অনুতপ্ত না হও, তা হলে তাদের মতো তোমরাও সকলে বিনষ্ট হবে।
৪ কিংবা সেই ১৮ জন সম্বন্ধে তোমরা কী মনে কর, যাদের উপর শীলোহের উঁচু গৃহ ভেঙে পড়েছিল আর এর ফলে তারা মারা গিয়েছিল? তারা কি জেরুসালেমের অন্য সমস্ত লোকের চেয়ে বেশি অপরাধী ছিল?
৫ একেবারেই না; কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যদি অনুতপ্ত না হও, তা হলে তাদের মতো তোমরাও সকলে বিনষ্ট হবে।”
৬ পরে তিনি এই দৃষ্টান্ত বললেন: “একজন ব্যক্তির আঙুর খেতে একটা ডুমুর গাছ ছিল আর তিনি সেখানে এসে সেই গাছে ফল খুঁজতে লাগলেন, কিন্তু কিছুই পেলেন না।
৭ তখন তিনি আঙুর খেতের কর্মচারীকে বললেন, ‘দেখো, আমি তিন বছর ধরে এসে এই ডুমুর গাছে ফল খুঁজছি, কিন্তু কিছুই পাইনি। গাছটা কেটে ফেলো! কেন এটা শুধু শুধু জমি নষ্ট করবে?’
৮ এতে সেই কর্মচারী বলল, ‘প্রভু, আরও এক বছর গাছটা থাকতে দিন। আমি এর চারদিক খুঁড়ে সার দেব।
৯ যদি এতে ফল ধরে তো ভালো; কিন্তু যদি না ধরে, তা হলে এটা কেটে ফেলবেন।’”
১০ পরে তিনি বিশ্রামবারে* একটা সমাজগৃহে শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
১১ আর দেখো! সেখানে একজন মহিলা ছিল, যে মন্দ স্বর্গদূতের কারণে ১৮ বছর ধরে অসুস্থ ছিল; সে কুঁজো ছিল এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত না।
১২ সেই মহিলাকে দেখে যিশু তাকে ডেকে বললেন: “হে নারী, তুমি তোমার অসুস্থতা থেকে মুক্ত হলে।”
১৩ আর তিনি তার উপর হাত রাখলেন, এতে সে সঙ্গেসঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়াল এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল।
১৪ কিন্তু, যিশু বিশ্রামবারে সুস্থ করেছেন বলে সমাজগৃহের অধ্যক্ষ অসন্তুষ্ট হল এবং লোকদের বলল: “কাজ করার জন্য ছয় দিন তো রয়েছে; তাই সেই দিনগুলোতে এসে সুস্থ হও, বিশ্রামবারে নয়।”
১৫ কিন্তু, প্রভু তাকে বললেন: “ভণ্ডেরা, তোমরা প্রত্যেকে কি বিশ্রামবারে নিজ নিজ ষাঁড় ও গর্দভ খুলে সেগুলোকে জল খাওয়াতে নিয়ে যাও না?
১৬ তা হলে এই যে নারী, যে অব্রাহামের কন্যা এবং যাকে শয়তান ১৮ বছর ধরে বন্দি করে রেখেছিল, তাকে কি বিশ্রামবারে এই বন্ধন থেকে মুক্ত করা উচিত ছিল না?”
১৭ তিনি যখন এইসমস্ত কথা বললেন, তখন তাঁর সমস্ত বিরোধী লজ্জায় পড়ে গেল। কিন্তু, লোকেরা তাঁর এইসমস্ত অপূর্ব কাজ দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হল।
১৮ এরপর তিনি তাদের বলতে লাগলেন: “স্বর্গরাজ্য কীসের মতো আর কীসের সঙ্গেই-বা আমি এর তুলনা করব?
১৯ এটা একটা সরষেদানার মতো, যা একজন ব্যক্তি নিয়ে তার বাগানে বুনল। পরে তা বেড়ে উঠে একটা বৃক্ষে পরিণত হল এবং আকাশের পাখিরা এসে সেটার শাখায় আশ্রয় নিল।”
২০ আবার তিনি বললেন: “আমি কীসের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করব?
২১ এটা এমন খামিরের* মতো, যা একজন মহিলা নিয়ে দশ কিলোগ্রাম ময়দার মধ্যে মেশাল আর এতে সমস্ত ময়দা ফেঁপে উঠল।”
২২ পরে তিনি জেরুসালেমে যাওয়ার পথে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে শিক্ষা দিতে লাগলেন।
২৩ আর একজন লোক তাঁকে বলল: “প্রভু, যারা রক্ষা পাবে, তাদের সংখ্যা কি অল্প?” তখন যিশু তাদের বললেন:
২৪ “সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য প্রাণপণ করো, কারণ আমি তোমাদের বলছি, অনেকে সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে, কিন্তু পারবে না।
২৫ যখন গৃহকর্তা উঠে দরজা বন্ধ করে দেবেন, তখন তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় আঘাত করতে থাকবে, বলবে, ‘প্রভু, আমাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দিন!’ কিন্তু, তিনি তোমাদের বলবেন: ‘আমি জানি না, তোমরা কোথা থেকে এসেছ।’
২৬ তখন তোমরা এই কথা বলতে শুরু করবে, ‘আমরা আপনার সঙ্গে ভোজন-পান করেছি আর আপনি আমাদের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষা দিয়েছেন।’
২৭ কিন্তু, তিনি তোমাদের বলবেন, ‘আমি জানি না, তোমরা কোথা থেকে এসেছ। দুষ্টের দল, আমার কাছ থেকে দূর হও!’
২৮ যখন তোমরা দেখবে, অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব এবং সমস্ত ভাববাদী ঈশ্বরের রাজ্যে রয়েছে, কিন্তু তোমাদের বাইরে নিক্ষেপ করা হয়েছে, তখন তোমরা সেই স্থানে কাঁদবে এবং দাঁত কিড়মিড় করবে।
২৯ এ ছাড়া, পূর্ব ও পশ্চিম এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে লোকেরা আসবে এবং ঈশ্বরের রাজ্যে টেবিলে ভোজনে* বসবে।
৩০ আর দেখো! যারা শেষে রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথমে হবে এবং যারা প্রথমে রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ শেষে পড়বে।”
৩১ ঠিক সেই মুহূর্তে কয়েক জন ফরীশী এসে তাঁকে বলল: “তুমি এখান থেকে চলে যাও, কারণ হেরোদ* তোমাকে হত্যা করতে চাইছেন।”
৩২ তখন তিনি তাদের বললেন: “যাও, সেই ধূর্ত শিয়ালকে বলো, ‘দেখো! আমি আজ ও কাল মন্দ স্বর্গদূতদের বের করব এবং লোকদের সুস্থ করব আর তৃতীয় দিনে আমার এই কাজ শেষ করব।’
৩৩ যাই হোক, আজ, কাল ও পরশু আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব, কারণ জেরুসালেমের বাইরে কোনো ভাববাদী হত হবে এমনটা হতে পারে* না।
৩৪ জেরুসালেম, জেরুসালেম, তুমি ভাববাদীদের হত্যা করে থাক এবং তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয়, তাদের পাথর ছুড়ে থাক! আমি কত বার তোমার সন্তানদের একত্রিত করতে চেয়েছি, যেমনটা মুরগি ডানার নীচে এর বাচ্চাদের একত্রিত করে! কিন্তু, তোমরা রাজি হওনি।
৩৫ দেখো! ঈশ্বর তোমাদের গৃহ* পরিত্যাগ করবেন এবং তোমাদের হাতে ছেড়ে দেবেন। আমি তোমাদের বলছি, তোমরা এখন থেকে আর কোনোভাবেই আমাকে দেখতে পাবে না, যে-পর্যন্ত না বল, ‘ধন্য সেই ব্যক্তি, যিনি যিহোবার* নামে আসছেন!’”
পাদটীকাগুলো
^ শব্দকোষ দেখুন।
^ অর্থাৎ ইস্ট অথবা ইস্ট-জাতীয় দ্রব্য। শব্দকোষ দেখুন।
^ বা “হেলান দিয়ে।”
^ বা “এমনটা কল্পনা করা যায়।”
^ অর্থাৎ মন্দির।
^ শব্দকোষ দেখুন।