রাজাবলির প্রথম খণ্ড ১৯:১-২১

১৯  পরে, আহাব ঈষেবলকে সমস্ত কথা জানালেন। তিনি তাকে বললেন, এলিয় কী কী করেছেন এবং কীভাবে এলিয় সমস্ত ভাববাদীকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছেন। ২  তখন ঈষেবল একজন বার্তাবাহকের হাতে এলিয়ের কাছে এই বার্তা পাঠাল: “তুমি সমস্ত ভাববাদীর প্রতি যেমনটা করেছ, কাল এই সময়ের মধ্যে আমি যদি তোমার প্রতি তেমনটা না করি, তা হলে আমার দেবতারা যেন আমার উপর বিপর্যয় আনেন!” ৩  এই কথা শুনে এলিয় ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি সঙ্গেসঙ্গে উঠে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গেলেন। তিনি যখন যিহূদার বের্‌-শেবায় গিয়ে পৌঁছোলেন, তখন তিনি তার পরিচারককে সেখানেই রেখে গেলেন। ৪  তিনি এক দিনের পথ যাত্রা করে প্রান্তরে গেলেন আর সেখানে একটা ঝোপের নীচে বসে নিজের মৃত্যু কামনা করলেন। তিনি বললেন: “হে যিহোবা, আমি আর পারছি না! তুমি আমার প্রাণ নিয়ে নাও কারণ আমি আমার পূর্বপুরুষদের চেয়ে ভালো নই।” ৫  তারপর, তিনি ঝোপের নীচে শুলেন আর ঘুমিয়ে পড়লেন। হঠাৎই একজন স্বর্গদূত এসে তাকে ছুঁয়ে বললেন: “ওঠো, খেয়ে নাও।” ৬  তিনি উঠে দেখলেন, তার মাথার কাছে গরম পাথরের উপর একটা গোল রুটি রাখা আছে ও সেইসঙ্গে জলের একটা পাত্র রয়েছে। তিনি রুটি ও জল খেলেন এবং আবার শুয়ে পড়লেন। ৭  পরে, যিহোবার স্বর্গদূত আবারও তার কাছে এলেন এবং তাকে ছুঁয়ে বললেন: “ওঠো, খেয়ে নাও কারণ তোমাকে এক দীর্ঘ পথ যাত্রা করতে হবে।” ৮  তখন তিনি উঠে খাওয়া-দাওয়া করলেন। সেই খাবার খেয়ে তিনি যে-শক্তি পেলেন, সেটার সাহায্যে তিনি ৪০ দিন এবং ৪০ রাত পায়ে হেঁটে যাত্রা করলেন। শেষে, তিনি সত্য ঈশ্বরের পর্বত হোরেবে এসে পৌঁছোলেন। ৯  সেখানে এলিয় একটা গুহার মধ্যে ঢুকলেন এবং সেখানেই রাত কাটালেন। তারপর, যিহোবা তাকে বললেন: “এলিয়, তুমি এখানে কী করছ?” ১০  এলিয় বললেন: “আমি স্বর্গীয় বাহিনীর শাসক যিহোবার জন্য অনেক উদ্যোগ দেখিয়েছি কারণ ইজরায়েলের লোকেরা তোমার চুক্তি ত্যাগ করেছে, তোমার বেদিগুলো ভেঙে দিয়েছে এবং তোমার ভাববাদীদের তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছে। কেবল আমিই বাকি রয়েছি আর এখন তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে।” ১১  কিন্তু, ঈশ্বর বললেন: “বাইরে বের হও আর পর্বতের উপরে যিহোবার সামনে দাঁড়াও।” আর দেখো! যিহোবা সেখান থেকে যাচ্ছিলেন এবং যিহোবার সামনে এক প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বইছিল, যেটার কারণে পর্বতগুলো ফেটে যাচ্ছিল এবং শৈলগুলো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু, যিহোবা সেই বাতাসের মধ্যে ছিলেন না। সেই বাতাস বওয়ার পর একটা ভূমিকম্প হল কিন্তু যিহোবা সেই ভূমিকম্পে ছিলেন না। ১২  ভূমিকম্পের পর আগুন জ্বলে উঠল কিন্তু যিহোবা সেই আগুনে ছিলেন না। আগুনের পর একটা কোমল ও মৃদু কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ১৩  এলিয় সেই কণ্ঠস্বর শোনামাত্র নিজের পোশাক* দিয়ে নিজের মুখ ঢাকলেন এবং গুহার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে গুহার মুখে দাঁড়ালেন। তখন একটা কণ্ঠস্বর এলিয়কে জিজ্ঞেস করল: “এলিয়, তুমি এখানে কী করছ?” ১৪  এলিয় বললেন: “আমি স্বর্গীয় বাহিনীর শাসক যিহোবার জন্য অনেক উদ্যোগ দেখিয়েছি কারণ ইজরায়েলের লোকেরা তোমার চুক্তি ত্যাগ করেছে, তোমার বেদিগুলো ভেঙে দিয়েছে এবং তোমার ভাববাদীদের তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছে। কেবল আমিই বাকি রয়েছি আর এখন তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে।” ১৫  যিহোবা তাকে বললেন: “তুমি এখান থেকে ফিরে যাও আর দামেস্কের প্রান্তরে যাও। দামেস্কে তুমি হসায়েলকে সিরিয়ার রাজা হিসেবে অভিষেক করো। ১৬  নিম্‌শির নাতি যেহূকে ইজরায়েলের রাজা হিসেবে অভিষেক করো আর তোমার জায়গায় ভাববাদী হওয়ার জন্য আবেল-মহোলার বাসিন্দা শাফটের ছেলে ইলীশায়কে* অভিষেক করো। ১৭  যে-কেউ হসায়েলের তলোয়ার থেকে বেঁচে যাবে, যেহূ তাকে মেরে ফেলবে আর যে-কেউ যেহূর তলোয়ার থেকে বেঁচে যাবে, ইলীশায় তাকে মেরে ফেলবে। ১৮  আর দেখো, ইজরায়েলে এখনও আমার ৭,০০০ জন লোক রয়েছে, যারা বালের সামনে হাঁটু গেড়ে নত হয়নি এবং তাকে চুম্বন করেনি।” ১৯  তখন এলিয় সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর, তিনি শাফটের ছেলে ইলীশায়ের সঙ্গে দেখা করলেন, যিনি লাঙল টানছিলেন। তিনি ১২ জোড়া ষাঁড় দিয়ে লাঙল টানছিলেন আর নিজে সবচেয়ে পিছনে ১২তম জোড়ার সঙ্গে ছিলেন। এলিয় ইলীশায়ের কাছে গেলেন এবং নিজের পোশাকটা* তার গায়ে দিলেন। ২০  ইলীশায় সঙ্গেসঙ্গে ষাঁড়গুলো ছেড়ে দৌড়ে এলিয়ের কাছে গেলেন। তিনি এলিয়ের কাছে অনুরোধ করলেন: “দয়া করে আমাকে আমার বাবা-মাকে চুম্বন করে বিদায় নিতে দিন। তারপর, আমি আপনার সঙ্গে যাব।” এলিয় বললেন: “ঠিক আছে যাও, আমি তোমাকে আটকাব না।” ২১  তখন ইলীশায় ফিরে গেলেন এবং এক জোড়া ষাঁড় নিয়ে সেগুলোকে বলি হিসেবে উৎসর্গ করলেন। তারপর, তিনি লাঙল এবং জোয়ালের কাঠ পুড়িয়ে ষাঁড়গুলোর মাংস সেদ্ধ করলেন এবং লোকদের সেটা দিলেন আর তারা তা খেল। এরপর, তিনি এলিয়কে অনুসরণ করলেন এবং তার সেবা করতে লাগলেন।

পাদটীকাগুলো

বা “ভাববাদীর পোশাক।”
অর্থ, “ঈশ্বর পরিত্রাণ।”
বা “ভাববাদীর পোশাকটা।”