শমূয়েলের প্রথম পুস্তক ১৬:১-২৩
১৬ কিছুসময় পর যিহোবা শমূয়েলকে বললেন: “তুমি আর কত দিন ধরে শৌলের জন্য শোক করবে? আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করেছি। সে আর রাজা হিসেবে ইজরায়েলের উপর রাজত্ব করবে না। তুমি শিঙে* তেল ভরে বেথলেহেমে বসবাসরত যিশয়ের বাড়িতে যাও কারণ আমি তার ছেলেদের মধ্য থেকে একজনকে রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছি।”
২ কিন্তু, শমূয়েল বললেন: “আমি কীভাবে সেখানে যাব? শৌল যদি জানতে পারেন, তা হলে তিনি আমাকে মেরে ফেলবেন।” যিহোবা তাকে বললেন: “তুমি তোমার সঙ্গে একটা গরু নিয়ে যাও আর বলো, ‘আমি যিহোবার উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে এসেছি।’
৩ তুমি যেখানে বলি উৎসর্গ করবে, সেখানে আসার জন্য যিশয়কে আমন্ত্রণ জানাবে। তারপর, আমি তোমাকে জানাব, তোমাকে কী করতে হবে। আমি তোমাকে দেখাব, আমি কাকে বেছে নিয়েছি। তুমি আমার হয়ে তাকে অভিষেক করবে।”
৪ যিহোবা শমূয়েলকে যা করতে বললেন, শমূয়েল ঠিক তা-ই করলেন। তিনি যখন বেথলেহেমে গেলেন, তখন সেখানকার প্রাচীনেরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তারা তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “সব ঠিক আছে তো?”
৫ তিনি বললেন: “হ্যাঁ, ঠিক আছে। আমি যিহোবার উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে এসেছি। তোমরা সবাই নিজেদের পবিত্র করো আর আমার সঙ্গে বলি উৎসর্গ করতে এসো।” তারপর, তিনি যিশয় এবং তার ছেলেদের পবিত্র করলেন আর তাদের বলি উৎসর্গ করার জন্য আসতে বললেন।
৬ তারা যখন সেখানে এল, তখন শমূয়েল ইলীয়াবকে দেখতে পেলেন আর ভাবলেন: “এ-ই নিশ্চয়ই যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি।”
৭ কিন্তু, যিহোবা শমূয়েলকে বললেন: “তার চেহারা কেমন বা সে কতটা লম্বা, সেটার প্রতি মনোযোগ দিয়ো না কারণ আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করেছি। মানুষ যেভাবে দেখে, ঈশ্বর সেভাবে দেখেন না। মানুষ শুধু বাইরের চেহারা দেখে, কিন্তু যিহোবা হৃদয় দেখেন।”
৮ পরে, যিশয় অবীনাদবকে ডাকলেন আর তাকে শমূয়েলের সামনে দাঁড় করালেন। কিন্তু, শমূয়েল বললেন: “না, যিহোবা একেও বেছে নেননি।”
৯ তারপর, যিশয় শম্মকে শমূয়েলের সামনে দাঁড় করালেন। কিন্তু, শমূয়েল বললেন: “যিহোবা একেও বেছে নেননি।”
১০ এভাবে যিশয় তার সাতটি ছেলেকেই শমূয়েলের সামনে নিয়ে এলেন। কিন্তু, শমূয়েল তাকে বললেন: “যিহোবা এদের মধ্যে কাউকেই বেছে নেননি।”
১১ শেষে, শমূয়েল যিশয়কে জিজ্ঞেস করলেন: “তোমার কি আর কোনো ছেলে রয়েছে?” তিনি বললেন: “হ্যাঁ, আমার আরেকটি ছেলে রয়েছে। ও সবার ছোটো, ও মেষ চরাতে গিয়েছে।” শমূয়েল যিশয়কে বললেন: “ওকেও ডেকে পাঠাও কারণ যতক্ষণ না ও আসবে, ততক্ষণ আমরা খেতে বসব না।”
১২ তখন যিশয় তার সবচেয়ে ছোটো ছেলেকে ডেকে পাঠালেন আর তাকে ভিতরে নিয়ে এলেন। তিনি দেখতে খুবই সুন্দর ছিলেন। তার গায়ের রং ছিল লালচে আর তার চোখ দুটোও খুব সুন্দর ছিল। যিহোবা শমূয়েলকে বললেন: “ওঠো, একে অভিষেক করো। আমি একেই বেছে নিয়েছি!”
১৩ তখন শমূয়েল তেল ভর্তি শিংটা নিয়ে সেই ছেলেটিকে তার দাদাদের সামনে অভিষেক করলেন। সেই দিন থেকে যিহোবার পবিত্র শক্তি দায়ূদের উপর কাজ করতে শুরু করল। পরে, শমূয়েল উঠলেন আর রামায় ফিরে গেলেন।
১৪ কিন্তু, যিহোবার পবিত্র শক্তি শৌলের উপর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। যিহোবা শৌলকে মন্দ চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে দিলেন, যেটার ফলে তিনি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতেন।
১৫ শৌলকে তার সেবকেরা বলল: “দেখুন, ঈশ্বর আপনাকে মন্দ চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে দিয়েছেন। এইজন্য আপনি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন।
১৬ তাই হে প্রভু, আপনার সেবকদের আদেশ দিন, যেন আমরা আপনার জন্য এমন একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করি, যে খুব ভালো বীণা বাজাতে পারে। ঈশ্বর যখনই আপনাকে মন্দ চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে দেবেন, তখনই সেই ব্যক্তি আপনার জন্য বীণা বাজাবে আর আপনি মনের শান্তি লাভ করবেন।”
১৭ তখন শৌল তার সেবকদের বললেন: “ঠিক আছে, তোমরা তা-ই করো। তোমরা গিয়ে এমন একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করো, যে খুব ভালো বীণা বাজাতে পারে আর তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
১৮ তার সেবকদের মধ্যে একজন বলল: “আমি একটি ছেলেকে জানি, যে খুব ভালো বীণা বাজাতে পারে। সে বেথলেহেমের বাসিন্দা যিশয়ের ছেলে। ছেলেটি খুবই সাহসী আর সে একজন বীরযোদ্ধা। সে খুব ভালো কথা বলতে পারে। সে দেখতেও খুব সুন্দর আর যিহোবা তার সঙ্গে রয়েছেন।”
১৯ তখন শৌল তার বার্তাবাহকদের মাধ্যমে যিশয়ের কাছে এই খবর পাঠালেন: “তুমি তোমার ছেলে দায়ূদকে আমার কাছে পাঠাও, যে মেষ চরায়।”
২০ তখন যিশয় একটা গাধার পিঠে রুটি এবং দ্রাক্ষারসের* একটা কুপা* চাপালেন এবং একটা ছাগলছানা নিলেন আর এই সমস্ত কিছু তার ছেলে দায়ূদের হাতে শৌলের কাছে পাঠালেন।
২১ এভাবে দায়ূদ শৌলের কাছে এলেন আর তার সেবা করতে লাগলেন। শৌল দায়ূদকে খুব ভালোবাসতে শুরু করলেন আর দায়ূদ তার অস্ত্র বহনকারী সেবক হয়ে উঠলেন।
২২ শৌল যিশয়ের কাছে এই খবর পাঠালেন: “দয়া করে দায়ূদকে আমার কাছেই থাকতে দাও, যাতে ও আমার সেবা করে। আমার ওকে খুব ভালো লেগেছে।”
২৩ ঈশ্বর যখনই শৌলকে মন্দ চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে দিতেন, তখনই দায়ূদ বীণা বাজাতেন। এতে শৌল মনের শান্তি লাভ করতেন আর তার ভালো লাগত এবং তিনি মন্দ চিন্তাভাবনা থেকে রেহাই পেতেন।