শমূয়েলের প্রথম পুস্তক ১৮:১-৩০

১৮  দায়ূদ ও শৌলের এই কথোপকথনের পর যোনাথন ও দায়ূদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠল আর যোনাথন দায়ূদকে নিজের মতোই ভালোবাসতে শুরু করলেন। ২  সেই দিন থেকে শৌল দায়ূদকে নিজের কাছেই রেখে দিলেন আর তাকে তার বাবার বাড়িতে ফিরে যেতে দিলেন না। ৩  যোনাথন ও দায়ূদ নিজেদের মধ্যে একটা চুক্তি করলেন কারণ যোনাথন দায়ূদকে নিজের মতোই ভালোবাসতেন। ৪  যোনাথন তার হাতকাটা জামা খুলে দায়ূদকে দিলেন। এ ছাড়া, তিনি তাকে নিজের যুদ্ধের পোশাক, তলোয়ার, ধনুক ও কোমরবন্ধনী* দিলেন। ৫  দায়ূদ যুদ্ধে যেতে শুরু করলেন। শৌল তাকে যেখানেই পাঠাতেন, তিনি জয়ী হয়ে ফিরে আসতেন।* তাই, শৌল তাকে তার সেনাধ্যক্ষ করে তুললেন আর এতে শৌলের সেবকেরা এবং বাকি সমস্ত লোক খুব খুশি হল। ৬  দায়ূদ এবং অন্যান্য সৈন্যেরা যখন পলেষ্টীয়দের হত্যা করে ফিরে আসতেন, তখন ইজরায়েলের সমস্ত নগরের মহিলারা আনন্দে খঞ্জনি এবং তিনটে তারওয়ালা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচ-গান করতে করতে রাজা শৌলকে স্বাগত জানানোর জন্য বের হয়ে আসত। ৭  তারা আনন্দ করতে করতে এই গান গাইত: “শৌল মারলেন হাজার হাজারআর দায়ূদ মারলেন লক্ষ লক্ষ।” ৮  এই গান শুনে শৌল অসন্তুষ্ট হলেন এবং ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি মনে মনে বললেন: “তারা দায়ূদের বেলায় বলল, লক্ষ লক্ষ কিন্তু আমার বেলায় শুধু হাজার হাজার। ওর রাজত্ব পাওয়া ছাড়া আর কীই-বা বাকি রইল!” ৯  সেই দিন থেকে শৌল সবসময় দায়ূদকে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগলেন। ১০  পরের দিন, ঈশ্বর শৌলকে মন্দ চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হতে দিলেন। সেই দিন দায়ূদ যখন অন্য সময়ের মতোই শৌলের বাড়িতে বীণা বাজাচ্ছিলেন, তখন শৌল অদ্ভুত* আচরণ করতে লাগলেন। শৌলের হাতে একটা বর্শা ছিল ১১  আর তিনি এই ভেবে বর্শাটা দায়ূদের দিকে ছুড়লেন: ‘আমি দায়ূদকে দেওয়ালে গেঁথে দেব!’ তিনি দু-বার এমনটা করলেন, কিন্তু দু-বারই দায়ূদ বেঁচে গেলেন। ১২  শৌল দায়ূদকে ভয় পেতে লাগলেন কারণ তিনি দেখলেন, যিহোবা দায়ূদের সঙ্গে রয়েছেন, কিন্তু শৌলকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। ১৩  তাই, শৌল দায়ূদকে নিজের কাছ থেকে দূর করে দিলেন আর তাকে ১,০০০ জন সৈন্যের উপর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করলেন। দায়ূদ নিজের সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে যেতেন। ১৪  দায়ূদ তার সমস্ত কাজে সফল হচ্ছিলেন* আর যিহোবা তার সঙ্গে ছিলেন। ১৫  শৌল যখন দেখলেন, দায়ূদ খুবই সফল হয়ে উঠছেন, তখন তিনি তাকে ভয় পেতে লাগলেন। ১৬  কিন্তু, সমস্ত ইজরায়েল ও যিহূদা দায়ূদকে খুব ভালোবাসত কারণ যুদ্ধে তিনি তাদের নেতৃত্ব দিতেন। ১৭  পরে, শৌল দায়ূদকে বললেন: “আমি আমার বড়ো মেয়ে মেরবের সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। কিন্তু, তুমি আমার জন্য বীরযোদ্ধা হয়ে থাকো আর যিহোবার হয়ে যুদ্ধ করতে থাকো।” আসলে শৌল ভাবছিলেন: ‘ও যদি যুদ্ধে যায়, তা হলে ও পলেষ্টীয়দের হাতে মারা পড়বে। আমাকে আর ওকে মারতে হবে না।’ ১৮  তখন দায়ূদ শৌলকে বললেন: “আমি কে আর ইজরায়েলে আমার বাবার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনেরাই-বা কারা যে, আমি রাজার জামাই হব?” ১৯  কিন্তু, যখন দায়ূদের সঙ্গে শৌলের মেয়ে মেরবের বিয়ে দেওয়ার সময় এল, তখন জানা গেল, শৌল ইতিমধ্যে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলের সঙ্গে মেরবের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ২০  শৌলের মেয়ে মীখল দায়ূদকে ভালোবাসতেন। এই বিষয়টা যখন শৌলকে জানানো হল, তখন তিনি খুব খুশি হলেন। ২১  তিনি ভাবলেন: “দায়ূদকে ফাঁদে ফেলার এটা একটা ভালো সুযোগ। আমি ওর সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য এমন একটা শর্ত রাখব, যেটার কারণে ও পলেষ্টীয়দের হাতে মারা পড়বে।” শৌল আরেক বার দায়ূদকে বললেন: “আজ তুমি আমার জামাই হবে।” ২২  শৌল তার সেবকদের আদেশ দিলেন: “তোমরা গোপনে দায়ূদকে বলো, ‘দেখো! রাজা তোমাকে খুব ভালোবাসেন আর তার সেবকেরাও তোমাকে পছন্দ করে। তাই, তুমি রাজার জামাই হয়ে যাও।’” ২৩  শৌলের সেবকেরা যখন দায়ূদকে এই কথা বলল, তখন দায়ূদ বললেন: “আমি কীভাবে রাজার জামাই হব? আমি একজন গরিব ও নগণ্য মানুষ।” ২৪  তখন শৌলের সেবকেরা শৌলকে জানাল: “দায়ূদ অমুক অমুক কথা বলেছেন।” ২৫  শৌল তাদের বললেন: “তোমরা গিয়ে দায়ূদকে বলো, ‘রাজা কোনো পণ চান না। তিনি শুধু ১০০ জন পলেষ্টীয়ের লিঙ্গাগ্রের ত্বক চান। তিনি তার শত্রুদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে চান।’” আসলে, এটা শৌলের ষড়যন্ত্র ছিল কারণ তিনি চেয়েছিলেন, যেন দায়ূদ পলেষ্টীয়দের হাতে মারা পড়ে। ২৬  শৌলের সেবকেরা তার এই কথাগুলো দায়ূদকে গিয়ে বলল। শৌলের জামাই হওয়ার বিষয়টা দায়ূদের ভালো বলে মনে হল। দায়ূদ নির্ধারিত সময়ের আগেই ২৭  তার লোকদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন আর ২০০ জন পলেষ্টীয় পুরুষকে মেরে ফেললেন এবং তাদের সবার লিঙ্গাগ্রের ত্বক রাজার কাছে নিয়ে এলেন, যাতে তিনি রাজার জামাই হতে পারেন। তাই, শৌল দায়ূদের সঙ্গে তার মেয়ে মীখলের বিয়ে দিলেন। ২৮  শৌল বুঝতে পারলেন যে, যিহোবা দায়ূদের সঙ্গে রয়েছেন আর তার মেয়ে মীখল দায়ূদকে ভালোবাসেন। ২৯  এর ফলে, শৌল দায়ূদকে আরও বেশি ভয় পেতে লাগলেন আর সারাজীবন দায়ূদের শত্রু হয়ে রইলেন। ৩০  পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষেরা ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসত। তারা যখনই আসত, তখনই দায়ূদ শৌলের অন্য সমস্ত লোকের চেয়ে আরও বেশি সফল হতেন।* তাই, লোকেরা দায়ূদকে অনেক সম্মান করতে লাগল।

পাদটীকাগুলো

বা “বেল্ট।”
বা “তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতেন।”
বা “ভাববাদীর মতো।”
বা “সমস্ত কাজ বিজ্ঞতার সঙ্গে করছিলেন।”
বা “আরও বেশি বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতেন।”