শমূয়েলের দ্বিতীয় পুস্তক ২০:১-২৬

২০  বিন্যামীন বংশে শিবা নামে একজন পুরুষ ছিল, যে খুব সমস্যা সৃষ্টি করত। সে বিখ্রির ছেলে ছিল। শিবা শিঙা বাজিয়ে ঘোষণা করল: “দায়ূদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যিশয়ের ছেলের উত্তরাধিকার তার কাছেই থাকুক। হে ইজরায়েলীয়েরা, তোমরা সবাই নিজের নিজের দেবতার কাছে* ফিরে যাও!” ২  তখন ইজরায়েলের সমস্ত লোক দায়ূদকে অনুসরণ করা ছেড়ে দিয়ে বিখ্রির ছেলে শিবাকে অনুসরণ করতে লাগল। কিন্তু, যিহূদার লোকেরা তাদের রাজাকে ছেড়ে দিল না। তারা জর্ডন থেকে জেরুসালেম পর্যন্ত তার সঙ্গেই থাকল। ৩  রাজা দায়ূদ যখন জেরুসালেমে নিজের প্রাসাদে ফিরে এলেন, তখন তিনি সেই দশ জন উপপত্নীকে একটা আলাদা বাড়িতে রাখলেন, যাদের তিনি রাজপ্রাসাদের দেখাশোনা করার জন্য রেখে গিয়েছিলেন। তিনি সেই বাড়িটা পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তিনি সেই মহিলাদের খাবারদাবার জোগাতে থাকলেন কিন্তু তাদের সঙ্গে কোনো শারীরিক সম্পর্ক করলেন না। তারা তাদের মৃত্যু পর্যন্ত সেই বাড়িতে বন্দি হয়ে রইল আর স্বামী থাকা সত্ত্বেও তাদের বিধবার মতো জীবনযাপন করতে হল। ৪  পরে রাজা অমাসাকে বললেন: “তিন দিনের মধ্যে যিহূদার লোকদের আমার সামনে একত্রিত করো আর তুমিও এখানে থাকবে।” ৫  অমাসা যিহূদার সমস্ত লোককে একত্রিত করার জন্য বেরিয়ে পড়লেন কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে এলেন না। ৬  তারপর, দায়ূদ অবীশয়কে বললেন: “বিখ্রির ছেলে শিবা অবশালোমের চেয়েও আমাদের বেশি ক্ষতি করতে পারে। তাই, তুমি আমার* সেবকদের নিয়ে তাড়াতাড়ি করে শিবার পিছু ধাওয়া করো আর ওকে ধরে আনো, যাতে ও প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নগরগুলোতে পালিয়ে গিয়ে আমাদের হাত থেকে বেঁচে না যায়।” ৭  তখন যোয়াবের লোকেরা, করেথীয়েরা, পলেথীয়েরা এবং সমস্ত বীরযোদ্ধা তার* সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল। তারা সবাই বিখ্রির ছেলে শিবার পিছু ধাওয়া করার জন্য জেরুসালেম থেকে বেরিয়ে পড়ল। ৮  তারা যখন গিবিয়োনে বড়ো পাথরের কাছে পৌঁছোল, তখন অমাসা তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এলেন। সেইসময় যোয়াব সৈন্যের পোশাক পরে ছিলেন আর তার কোমরে তলোয়ার বাঁধা ছিল। তিনি যখন এগিয়ে গেলেন, তখন তার তলোয়ারটা খাপ থেকে বেরিয়ে নীচে পড়ে গেল। ৯  যোয়াব অমাসাকে বললেন: “ভাই আমার, কেমন আছ?” এরপর, যোয়াব তার ডান হাত দিয়ে অমাসার দাড়িটা এমনভাবে ধরলেন, যেন তিনি তাকে চুম্বন করতে যাচ্ছেন। ১০  অমাসা লক্ষ করেননি যে, যোয়াবের হাতে তলোয়ার রয়েছে। যোয়াব অমাসার পেটে তলোয়ার ঢুকিয়ে দিলেন আর তার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। যোয়াবকে দ্বিতীয় বার আঘাত করতে হল না, এক বারই যথেষ্ট ছিল। এরপর, যোয়াব এবং তার ভাই অবীশয় বিখ্রির ছেলে শিবার পিছু ধাওয়া করার জন্য এগিয়ে গেলেন। ১১  যোয়াবের একজন যুবক অমাসার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল আর বলতে লাগল: “যারা যোয়াবের পক্ষে রয়েছে এবং যারা দায়ূদের লোক, তারা সবাই যেন যোয়াবকে অনুসরণ করে!” ১২  অমাসা রাস্তার মাঝখানে রক্তে মাখামাখি হয়ে ছটফট করছিলেন আর সৈন্যেরা যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছিল। এই সমস্ত কিছু দেখে সেই যুবক অমাসাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে মাঠে নিয়ে গেল। তারপর, সে অমাসার উপর একটা কাপড় দিয়ে দিল কারণ সে দেখল, যে-কেউ তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, সে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ১৩  সে যখন অমাসাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিল, তখন সমস্ত লোক বিখ্রির ছেলে শিবাকে ধরার জন্য যোয়াবের পিছন পিছন চলতে লাগল। ১৪  শিবা ইজরায়েলের সমস্ত বংশের এলাকার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে বৈৎ-মাখার আবেল নগরে প্রবেশ করল। বিখ্রির বংশের সমস্ত লোক একত্রিত হল আর তারাও শিবার পিছন পিছন নগরের ভিতরে প্রবেশ করল। ১৫  যোয়াব এবং তার লোকেরা* বৈৎ-মাখার আবেল নগরে এল আর নগরটা অবরোধ করল। সেই নগরের প্রাচীরের চারপাশে একটা সুরক্ষাকারী ঢালু ঢিবি ছিল। যোয়াব এবং তার লোকেরা নগরটার উপর আক্রমণ করার জন্য একটা ঢালু ঢিবি তৈরি করল আর নগরের প্রাচীর ভাঙতে শুরু করল। ১৬  তখন সেই নগরের একজন বুদ্ধিমতী মহিলা নগরের প্রাচীরের উপর থেকে চিৎকার করে বলল: “সৈন্যেরা শোনো! দয়া করে যোয়াবকে বলো, যেন তিনি এখানে আসেন। আমি তাকে কিছু বলতে চাই।” ১৭  তখন যোয়াব সেই মহিলার কাছে গেলেন আর সেই মহিলা বলল: “আপনি কি যোয়াব?” তিনি বললেন: “হ্যাঁ।” সেই মহিলা বলল: “আপনার এই দাসী কিছু বলতে চায়।” যোয়াব বললেন: “বলো, কী বলতে চাও।” ১৮  সেই মহিলা বলল: “প্রাচীন কালে আমাদের নগরের বিষয়ে এই কথা প্রচলিত ছিল, ‘পরামর্শ চাইলে আবেলে যাও, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ ১৯  আমি ইজরায়েলের শান্তিপ্রিয় ও বিশ্বস্ত লোকদের হয়ে কথা বলছি। কেন আপনি এমন এক নগর ধ্বংস করতে চাইছেন, যেটা ইজরায়েলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক নগর? কেন আপনি যিহোবার দেওয়া উত্তরাধিকারকে বিনষ্ট করতে* চাইছেন?” ২০  যোয়াব বললেন: “আমি এই নগরটা ধ্বংস করার এবং বিনষ্ট করার কথা এমনকী চিন্তাও করতে পারি না। ২১  আমার এইরকম কোনো উদ্দেশ্য নেই। আসলে, ইফ্রয়িমের পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা এবং বিখ্রির ছেলে শিবা রাজা দায়ূদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।* সে তোমাদের নগরে ঢুকে পড়েছে। তোমরা যদি ওকে আমার হাতে তুলে দাও, তা হলে আমি নগর ছেড়ে চলে যাব।” তখন সেই মহিলা যোয়াবকে বলল: “ঠিক আছে, ওর মাথা কেটে প্রাচীরের উপর দিয়ে আপনার কাছে ছুড়ে দেওয়া হবে।” ২২  সেই বুদ্ধিমতী মহিলা সঙ্গেসঙ্গে গিয়ে নগরের সমস্ত লোককে এই কথা জানাল। তারা বিখ্রির ছেলে শিবার মাথা কেটে যোয়াবের কাছে ছুড়ে দিল। তারপর, যোয়াব শিঙা বাজালেন আর তার সমস্ত লোক সেই নগর ছেড়ে নিজের নিজের বাড়ি ফিরে গেল আর যোয়াব জেরুসালেমে রাজার কাছে ফিরে গেলেন। ২৩  যোয়াব ইজরায়েলের পুরো সেনাবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। যিহোয়াদার ছেলে বনায় করেথীয় ও পলেথীয়দের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২৪  আর যাদের দিয়ে জোর করে দাসের কাজ করানো হত, তাদের অধ্যক্ষ ছিলেন অদোরাম। অহীলূদের ছেলে যিহোশাফট ঘটনার নথি রাখতেন। ২৫  শবা সচিব ছিলেন এবং সাদোক ও অবিয়াথর যাজক ছিলেন। ২৬  যায়ীরের বংশের ঈরাও দায়ূদের একজন মুখ্যমন্ত্রী* ছিলেন।

পাদটীকাগুলো

বা সম্ভবত, “নিজের নিজের তাঁবুতে।”
আক্ষ., “তোমার প্রভুর।”
খুব সম্ভবত, অবীশয়।
আক্ষ., “তারা।”
আক্ষ., “উত্তরাধিকারকে গিলে ফেলতে।”
আক্ষ., “বিরুদ্ধে হাত তুলেছে।”
আক্ষ., “যাজক।”