শমূয়েলের দ্বিতীয় পুস্তক ২১:১-২২

২১  দায়ূদের সময় ইজরায়েলে টানা তিন বছর ধরে দুর্ভিক্ষ হল। দায়ূদ যখন যিহোবার কাছে পরামর্শ চাইলেন, তখন যিহোবা বললেন: “শৌল এবং তার পরিবার রক্তপাতের দোষে দোষী কারণ সে গিবিয়োনীয়দের মেরে ফেলেছিল।” ২  তখন রাজা গিবিয়োনীয়দের ডেকে পাঠালেন আর তাদের সঙ্গে কথা বললেন। (গিবিয়োনীয়েরা ইজরায়েলীয় ছিল না। এর পরিবর্তে, তারা ছিল ইমোরীয়দের অবশিষ্ট লোক। ইজরায়েলীয়েরা তাদের জীবিত রাখার দিব্য করেছিল, কিন্তু শৌল ইজরায়েল ও যিহূদার লোকদের জন্য অতিরিক্ত উদ্যোগী হয়ে সমস্ত গিবিয়োনীয়কে মেরে ফেলার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন।) ৩  দায়ূদ গিবিয়োনীয়দের বললেন: “বলো, আমি তোমাদের জন্য কী করব? যে-পাপ করা হয়েছে, সেটার প্রায়শ্চিত্তের জন্য আমি এমন কী করব, যাতে তোমরা যিহোবার লোকদের* আশীর্বাদ কর?” ৪  গিবিয়োনীয়েরা বলল: “শৌল এবং তার পরিবার আমাদের প্রতি যা করেছে, সোনা-রুপো দিয়ে সেটার ক্ষতিপূরণ করা যাবে না আর আমাদের এই অধিকারও নেই যে, আমরা ইজরায়েলে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করব।” তখন দায়ূদ বললেন: “তোমরা যা বলবে, আমি তোমাদের জন্য তা-ই করব।” ৫  তারা বলল: “যে-ব্যক্তি আমাদের বিনষ্ট করে দিয়েছিল এবং ইজরায়েলের সমস্ত এলাকা থেকে আমাদের মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল, ৬  তার বংশধরদের মধ্য থেকে সাত জন পুরুষকে আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা তাদের মৃতদেহ যিহোবার সামনে গিবিয়ার নগরে ঝুলিয়ে দেব, যেটা যিহোবার মনোনীত ব্যক্তি শৌলের নগর।” তখন রাজা বললেন: “আমি তোমাদের হাতে তাদের তুলে দেব।” ৭  কিন্তু, রাজা যোনাথনের ছেলে এবং শৌলের নাতি মফীবোশতের প্রতি সমবেদনা দেখালেন কারণ দায়ূদ ও যোনাথন যিহোবার সামনে একে অন্যের কাছে শপথ করেছিলেন। ৮  তাই, তিনি শৌলের দুই ছেলে অর্মোণি ও মফীবোশৎকে নিলেন, যাদের মা ছিল অয়ার মেয়ে রিস্‌পা। এ ছাড়া, দায়ূদ শৌলের মেয়ে মীখলের* পাঁচটি ছেলেকেও নিলেন, যাদের বাবা ছিল মহোলাতীয় বর্সিল্লয়ের ছেলে অদ্রীয়েল। ৯  রাজা সেই সাত জন পুরুষকে গিবিয়োনীয়দের হাতে সমর্পণ করলেন। গিবিয়োনীয়েরা তাদের মেরে ফেলল আর তাদের মৃতদেহ পর্বতের উপরে যিহোবার সামনে ঝুলিয়ে দিল। এভাবে সাত জনই একসঙ্গে মারা গেল। তাদের শস্য কাটার প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই অর্থাৎ যব কাটার শুরুর দিকেই মেরে ফেলা হল। ১০  তারপর, অয়ার মেয়ে রিস্‌পা চট নিয়ে শিলার উপর সেটা পেতে বসল। সে শস্য কাটার সময়ের শুরু থেকে সেই পর্যন্ত সেখানে বসে রইল, যতক্ষণ না আকাশ থেকে সেই মৃতদেহগুলোর উপর বৃষ্টি পড়ল। রিস্‌পা দিনের বেলায় আকাশের পাখিদের সেই মৃতদেহগুলোর উপর বসতে দিল না আর রাতেও মাঠের বন্যপশুদের সেগুলোর কাছে আসতে দিল না। ১১  পরে, অয়ার মেয়ে অর্থাৎ শৌলের উপপত্নী রিস্‌পা যা করেছে, সেই বিষয়ে দায়ূদকে জানানো হল। ১২  তখন দায়ূদ যাবেশ-গিলিয়দে গেলেন আর সেখানকার নেতাদের* কাছ থেকে শৌল এবং তার ছেলে যোনাথনের হাড়গোড় নিয়ে এলেন। পলেষ্টীয়েরা যে-দিন গিল্‌বোয়ে শৌলকে হত্যা করেছিল, সেই দিন তারা শৌল ও যোনাথনের মৃতদেহ বৈৎ-শান নগরের খোলা জায়গায় ঝুলিয়ে দিয়েছিল। পরে, যাবেশ-গিলিয়দের নেতারা চুপিচুপি গিয়ে বৈৎ-শান থেকে তাদের মৃতদেহ নিয়ে এসেছিল। ১৩  দায়ূদ যখন শৌল ও যোনাথনের হাড়গোড় নিয়ে এলেন, তখন সেই সাত জন পুরুষের হাড়গোড়ও জড়ো করা হল, যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৪  তারপর, লোকেরা শৌল ও যোনাথনের হাড়গোড় বিন্যামীনের এলাকার সেলা শহরে নিয়ে গেল আর সেখানে শৌলের বাবা কীশের কবরে সেগুলো রাখল। রাজা তাদের যা যা করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তারা সেই সবই করল। এরপর, ঈশ্বর দেশের জন্য করা তাদের অনুরোধ শুনলেন। ১৫  পরে, আবারও পলেষ্টীয় ও ইজরায়েলীয়দের মধ্যে যুদ্ধ বাধল। তখন দায়ূদ এবং তার সেবকেরা গিয়ে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। যুদ্ধ করতে করতে দায়ূদ ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। ১৬  পলেষ্টীয় সেনাবাহিনীতে যিশ্‌বী-বনোব নামে এক পুরুষ ছিল, যে রফার বংশধর ছিল। তার তামার বর্শার ওজন ছিল ৩০০ শেকল* আর তার কাছে একটা নতুন তলোয়ার ছিল। যিশ্‌বী-বনোব দায়ূদকে মেরে ফেলার চেষ্টা করল। ১৭  কিন্তু, তখনই সরূয়ার ছেলে অবীশয় দায়ূদকে সাহায্য করতে এলেন আর তিনি সেই পলেষ্টীয়কে আঘাত করে মেরে ফেললেন। তখন দায়ূদের লোকেরা দিব্য করে এই শপথ করল: “আমরা আর আপনাকে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে আসতে দেব না! ইজরায়েলের প্রদীপ যেন নিভে না যায়!” ১৮  এরপর, আবারও পলেষ্টীয় ও ইজরায়েলীয়দের মধ্যে যুদ্ধ বাধল। এই যুদ্ধ গোবে হল আর হূশাতীয় সিব্বখয় রফার এক বংশধর সফকে এই যুদ্ধে মেরে ফেলল। ১৯  আবারও গোবে পলেষ্টীয় ও ইজরায়েলীয়দের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেল। এ-বারে বেথলেহেমের বাসিন্দা যারেওরগীমের ছেলে ইল্‌হানন গাতীয় গলিয়াৎকে মেরে ফেলল। গলিয়াতের বর্শার দণ্ডটা তাঁতের মোটা কাঠের মতো ছিল। ২০  গাতে আবারও যুদ্ধ বাধল। পলেষ্টীয় সেনাবাহিনীতে একজন অস্বাভাবিক লম্বা-চওড়া পুরুষ ছিল। তার হাতে ও পায়ে ছ-টা করে মোট ২৪টা আঙুল ছিল। সেও রফার বংশধর ছিল। ২১  সে ইজরায়েলকে টিটকারি দিতে থাকল। তাই, দায়ূদের দাদা শিমিয়ির ছেলে যোনাথন তাকে মেরে ফেলল। ২২  রফার এই চার জন বংশধর গাতে বাস করত আর তারা দায়ূদ এবং তার সেবকদের হাতে মারা পড়ল।

পাদটীকাগুলো

আক্ষ., “উত্তরাধিকারকে।”
বা সম্ভবত, “মেরবের।”
বা সম্ভবত, “জমিদারদের।”
প্রায় ৩.৪২ কিলোগ্রাম। পরিশিষ্টের খ১৪ দেখুন।